ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি

Ban Photo 11.04.17 (1)মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান প্রতিনিধি ঃ

পার্বত্য বান্দরবানের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব “সাংগ্রাই”-কে ঘিরে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। পাহাড়ি পল্লী গুলোতে এখন সাজ-সাজ রব। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরের বরণকে সামনে রেখে প্রতান্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। হাট-বাজারগুলোতে পড়েছে কেনা-কাটার ধুম। এদিকে সাংগ্রাই উৎসবকে সামনে রেখে বান্দরবানের হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। উৎসবে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বার্তায় সুখ, সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।

নতুন আশা আজ নব-প্রভাতে, শিশু-নারীসহ সকলে থাকুক শান্তিতে, বন্ধ হোক যত সহিংসতা, মৈত্রীময় স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় আসুক শুভ্রতা, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বান্দরবানের ৭টি উপজেলার লোকজন মেতে উঠেছে তাদের অন্যতম সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই বা বৈ-সা-বি উৎসবে। ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এ উৎসব। নতুন বছরকে বরণ এবং পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে মূলত পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র- ক্ষুদ্র জাতি স্বত্বা সমুহ নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে সমন্বিতভাবে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকে।

এই উৎসবকে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই, বম সম্প্রদায় চাংক্রান, খেয়াং সম্প্রদায় সাংগ্রান, খুমী সম্প্রদায় সাংগ্রায়, চাকমা সম্প্রদায় বিঝু ও তংচঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু বলে। এই সাত সম্প্রদায়ের এই উৎসবকে সমষ্টিগতভাবে বৈসাবি বলা হয়। বান্দরবানে মারমাদের সাংগ্রাই মূল আকর্ষন জলকেলি বা মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসব। সকল পাপাচার ও গ্লানি ধুয়ে মুছে নিতে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর উৎসবে মেতে উঠেন এসময়। এই উৎসব শুধু পাহাড়িরা নয় বাঙালিরাও নানা ভাবে পালন করে থাকেন। সাংগ্রাই উৎসবকে দেখার জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বহু দেশি বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে।

এদিকে বান্দরবানের প্রধান পাহাড়ি জাতি স্বত্বা মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে ৫ দিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, জলকেলি (পানি খেলা), পিঠা তৈরি, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, হাজারো প্রদীপ প্রজ্বলন, বয়স্ক পূজা এবং পাহাড়ি নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গান নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই উপলক্ষে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আগামী ১২ এপ্রিল বিশাল র‌্যালি ও ১৫ এপ্রিল বিকালে রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহে প্রধান অতিথি থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।

বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে বান্দরবান জেলার হাট-বাজারে কেনা-কাটা বেড়েছে। বিপনী বিতানগুলোতে এখন পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙ্গালী তরুণীদেরও উপচে পড়া ভিড়। বান্দরবানে এবার উৎসব মখুর পরিবেশে বৈসাবি পালিত হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে বান্দরবান সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরো সু-দৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।

পাঠকের মতামত: